❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) আমাদের দুরূদ সরাসরি শুনেন, নাকি ফেরেশতাদের মাধ্যমে পৌঁছানো হয়?


✍ জবাব :  আল্লাহ তা‘আলা কোরআনের মধ্যে কোনো ধরণের সময় ও স্থানের সাথে বিশেষায়িত না করে কাছে দূরের কথা না বলে দুরূদ ও সালামের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা নিজ বান্দাদেরকে সম্বোধন করে বলেন, إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا এই আয়াতের মধ্যে জুমলা ইসমিয়া إِنَّ দ্বারা জোর দিয়ে বলেছেন। দ্বিতীয়তো এই বাক্যে খবর যেটা তা ফেয়েলে মুজারে। যা দুই কালের উপর বুঝায়। স্থায়ী নতুন অর্থও দেয়। তৃতীয়ত আল্লাহ তাআলা দুরূদের গুরুত্ব মর্যাদা ও ফযিলাত সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রমাণ করার জন্য সরাসরি নিজের এবং ফেরেশতাদের সালাতের কথা ঘোষণা দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর উপর সালাত পাঠায়। হে ঈমানদানগণ তোমরাও তার উপর দুরূদ পাঠ করো ও সালাম পাঠাও।

এবার বুঝা গেলো সর্ব প্রকার জোর দিয়ে বলেছেন, এবার এর মধ্যে কোনো প্রকার আপত্তি থাকতে পারে না। আল্লাহর ইরশাদকে চিরস্থায়ী কাদীম কালামের মধ্যে সংরক্ষণ করেছেন। যাতে কোনো মানুষ কোনো প্রকার পরিবর্তন ঘটাতে না পারে। নিজস্ব কোনো ফায়দার কথা এতে সংযোজন করতে না পারে। এই এরশাদের ক্ষেত্রে কাফের, মুশরিক ও মুনাফিক এর আওতাধীন নয়। ওরা নাপাক ও খারাপ তারা কিভাবে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের দলে শরিক হতে পারে? তাই ওরা সকলে এই নির্দেশ থেকে বাহিরে।


এই আয়াতে খবর ও ইনশা দুটিই বিদ্যমান আছে।  আমি বরকত ও ফয়েয পাওয়ার আশায় একটি বর্ণনার উপর ক্ষান্ত করছি। 

عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من صل علي عند قبري سمعته و من صلى علي نائيا اكفى دنياه و آخرته و كنت له شهيدا أو شفيعا يوم القيامة


‘রাসূল (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে দাড়িয়ে দুরূদ পাঠ করে তা আমি শুনি। আর যে দূরে থেকে দুরূদ শরীফ পাঠ করে তার দুনিয়া ও আখেরাতের প্রয়োজন পূরণ করা হয়। আমি কেয়ামতের দিন তার সাক্ষি ও সুপারিশকারী হবো। (বায়হাকী, খতীব, ইবনে আসাকের, ইমাম তাকী উদ্দীন সুবকী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)


আরো বহু হাদীসে আছে, রাসূল (ﷺ) বলেন, দূর থেকে যে দুরূদ পাঠ করে এর জন্য আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। সে ফেরেশতা দুরূদ আমার কাছে পৌছে দেয়। আমি তারও সাক্ষি হই।


উল্লিখিত হাদীসে কবরের কাছে দুরূদ শরীফ পাঠ কতো ফযিলাত যে, রাসূল যেখানে নিজে শোনেন। এই পবিত্র শহরের বাসিন্দারা বড়ই সৌভাগ্যবান। তারা কোনো মাধ্যম বিনে রাসূলকে দুরূদ শরীফ শোনাতে পারে।


হযরত সোলায়মান বিন নুজাইম রাযি. বর্ণনা করেন, আমি স্বপ্নে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি। আমি দো জাহানের সরদারকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ যারা আপনার কাছে এসে দুরূদ শরীফ পাঠ করে আপনি কি জানতে পারেন? তিনি বলেন, হাঁ আমি জানি। আমি তার সালামের জবাব দেই। (সাঈদ বিন মানসূর বর্ণনা করেছেন, যেমনটি আল ইতহাফে আছে।)

عن نافع عن ابن عمر رضي الله عنهما قال من السنة أن تأتي قبر النبي صلى الله عليه وسلم من قبل القبلة ويجعل ظهرك إلى القبلة وتستقبل القبر بوجهك ثم تقول السلام عليك أيها النبي صلى الله عليه وسلم ورحمة الله وبركاته


মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله)তে আছে, হযরত ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর কবর যেয়ারতের সুন্নাত পদ্ধতি হলো, তার কবরে কেবলার দিক থেকে আসবে। কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে এবং কবরের দিকে মুখ করে  السلام عليك أيها النبي صلى الله عليه وسلم ورحمة الله وبركاته বলে সালাম দিবে।


হযরত ইমাম (رحمة الله) মোআত্তাতে হযরত আব্দুল্লাহ বিন দীনার রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ইবনে ওমর রাযি. যখন সফর করার ইচ্ছা করতেন বা সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন রাসূল (ﷺ) এর কবরের কাছে আসতেন। দুরূদ শরীফ পাঠ করে এবং দোআ করে তারপর ফিরে যেতেন।

 
Top